This is Tarapith Blog
Visit Our Main Website www.Tarapith.in

Friday 31 March 2017

#

কালীকা উপনিষদ


কালীকা উপনিষদ:-
ব্রহ্মরূপিণী সর্ব-ঐশ্বর্যশালিনী কালীকে ব্রহ্মরন্ধ্রেই প্রাপ্ত হওয়া যায়।। ১ ।।

তিনি সত্ত্ব, রজঃ ও তমো – এই তিন গুণ বিবর্জিতা; তিনিই সকল জীবের রূপে বিরাজমানা বা ‘ক্রীং’ অক্ষররূপা।। ২ ।।

ক্রীং বীজমন্ত্র তিনবার উচ্চারণ করে কূর্চবীজ হুং মন্ত্র দুবার উচ্চারণ করবে। তারপর দুবার ভূবনাবীজ হ্রীং মন্ত্র উচ্চারণ করে ‘দক্ষিণে কালিকে’ বলিয়াকে মাকে দর্শন করবে। ঐ হ্রীং মন্ত্রের সঙ্গে সপ্তবীজ উচ্চারণ করে অগ্নিপত্নী অর্থাৎ স্বাহা মন্ত্র যোগ করবে। এই মন্ত্র জপ করলে সাধক শিবময় হন।। ৩ ।।

তাঁরই সদগতি হয়, অপরের হয় না। তিনি নরশ্রেষ্ঠ, দেবশ্রেষ্ঠ ও সর্বশ্রেষ্ঠ হন। নতুন কালো মেঘের মতো যাঁর গায়ের রং, যিনি নিবিড়স্তনী, করাল দন্তবিশিষ্টা ও শবাসনা, সেই পরাপ্রকৃতি কালীকে ধ্যান করবে।। ৪ ।।

ত্রিকোণ বা নয় কোণবিশিষ্ট পদ্মের উপর ষড়ঙ্গন্যাস করে প্রকাশশীলা পরাপ্রকৃতিকে অর্চনা করবে। তাঁর দ্বারাই সর্বাঙ্গ প্রাপ্ত হবে।। ৫।।

কালী, কপালিনী, কুল্লা, কুরুকুল্লা, বিরোধিনী, বিপ্রচিত্তা, উগ্রা, উগ্রপ্রভা, দীপ্তা, নীলা, ঘনা, বলাকা, মাত্রা, মুদ্রা, মৃতা – এই পনেরোজন জ্যোতির্ময়ী দেবী পনেরোটি কোণে বিরাজ করছেন।। ৬।।

ব্রাহ্মী, মাহেশ্বরী, ঐন্ত্রী, চামুণ্ডা, কৌমারী, অপরাজিতা, বারাহী ও নারসিংহী – এঁরা অষ্টদলস্থিতা দেবী। দুই, তিন, চার, ছয়, বারো, আঠারো, চোদ্দো বা ষোলোস্থানীয় স্বরবিশেষ দ্বারা প্রণবের সঙ্গে এঁদের আমন্ত্রণ জানাতে হয় এবং মূলমন্ত্রের দ্বারা অঙ্গদেবতার আবাহন করে মূলমন্ত্রের দ্বারাই পূজা করতে হয়।। ৭ ।।

যে সাধক এই মন্ত্রগুলি নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে লক্ষ লক্ষ জপ করতে পারবেন, তিনি নিশ্চয়ই পাপমুক্ত হবেন। তাঁর দ্বারা আর দুষ্কার্জ হবে না, তিনি ব্রহ্মত্ব লাভ করবেন। তিনি সকল লোক হতে মুক্ত হয়ে আয়ু, আরোগ্য ও ঐশ্বর্যের পূর্ণ অধিকারী হবেন।। ৮ ।।

পঞ্চমকারের বেদসম্মত আধ্যাত্মিক অর্থ বুঝে যিনি তাঁর পূজা করবেন, তিনিই সতত ভজনশীল, তিনিই ভক্ত। তাঁর প্রচ্ছন্নতা দূর হয়ে মহত্ব প্রকাশিত হয়। তিনি নিরবিচ্ছিন্ন সুখ শান্তি লাভ করে সংসারপাশ থেকে চিরমুক্ত হন। সিদ্ধমন্ত্রজপকারী সাধকের অনিমাদি অষ্টসিদ্ধি লাভ হয়। তিনি জীবন্মুক্ত, সর্বশাস্ত্রবিদ হন। তাঁর হিংসাবৃত্তি বিনষ্ট হওয়ায় তিনি সকল জীবের বিশ্বাসভাজন হন।। ৯।।

সিদ্ধমন্ত্র যিনি জপ করেন তাঁর কাছে রাজাও ভৃত্যস্বরূপ হয়। সেই সাধক বিশ্বাতীত পরাৎপর আনন্দময় শিবস্বরূপ হন। এই সর্বদেবাত্মক বীজমন্ত্র যিনি জপ করেন, তিনি শিবস্বরূপ হন, এবং অনিমাদি অষ্টসিদ্ধির প্রভু হয়ে কালিকাকে লাভ করতে সক্ষম হন। শিব বলেছেন, হে দেবী, যিনি এই ঘোরা দক্ষিণাকালীকে ধ্যান করেন, তিনি কৃৎকর্তব্য, নিষ্পাপ, আমাদের উভয়ের কৃপাপাত্র ও জীবন্মুক্ত হন।। ১০।।

জপের দশমাংশ হোম করা উচিত, তাহলেই কালী তৃপ্ত হন। এতে জ্ঞান নিরুদ্ধ হয় না। কারণ দেবী সরস্বতীও অনিরুদ্ধা হয়ে চিরদিন সব কামনা পূর্ণ করেন। যে সাধক শ্রদ্ধাসহকারে এই কালীমন্ত্র জপ করেন, তিনি জ্ঞানলাভ করে চিরমুক্ত হন। শান্তচিত্তে সবসময় কালীপূজায় নিরত থেকে দিনের বেলা ব্রহ্মচারী অর্থাৎ ব্রহ্মনিষ্ঠ এবং রাতে কৌপিনধারী, আত্মরমণপরায়ণ ও জপপূজানিয়মে তৎপর হয়ে মাতৃরূপ নারীগণের সশ্রদ্ধ আজ্ঞাবহ হবে।। ১১।।

তারপর শুদ্ধ জলে তর্পণ ও পূজা করবে এবং সবসময় আত্মাকে কালীরূপে চিন্তা করবে। সকল স্ত্রীলোকের অনুগত হবে, তাতেই যাবতীয় হত্যাপাপ থেকে মুক্তিলাভ করতে পারবে। তারপর পঞ্চমকারের দ্বারা পূজা করলে ধনধান্য, পশু ও বিদ্যা প্রভৃতি যাবতীয় কাম্যবস্তু লাভ করবে। অতীত-ভবিষ্যৎ, দৃশ্যাদৃশ্য, স্থাবরজঙ্গম যা কিছু আছে, তা সবই কালীর কলামাত্র। কালিকাতন্ত্রে কথিত আছে, তিনি শ্রবণীয়, জ্ঞাতব্য, স্মরণীয় বা ধ্যানযোগ্য। শিব বলেছেন, হে দেবী, এই কালীমন্ত্রজপকারী অগম্যাগমন-পাপ ও ভ্রুণহত্যা-পাপ থেকে মুক্ত হয়ে সর্বসুখভাগী হয়ে থাকেন। তিনি সর্ববেত্তা, সর্বত্যাগী, নিঃসঙ্গ, শুদ্ধবুদ্ধি, সর্ববেদজ্ঞ, সর্বমন্ত্রজপকারী, সর্বশাস্ত্রজ্ঞ ও সর্বযজ্ঞকারী হয়ে তোমার ও আমার অত্যন্ত প্রিয় হন।। ১২।।

শিব আরও বলেছেন, সাধক সংশয়শূন্য হয়ে সব কাজ মনের দ্বারা সম্পাদনা করবেন এবং তারপর অপূর্ব জ্যোতির্ময় ত্রিকোণ মূলাধার চিন্তা করে সেই মূলাধারের অধঃ ও উর্ধ্বে সুষুম্নাকে স্থাপন করবে।। ১৩।।

নীলমেঘের মধ্যে স্থিতা, দীপ্তিশালিনী, বিদ্যুৎরেখাসমা, সূর্যের মতো অতুলনীয়া নীলা ও পীতা দেবীকে স্মরণ করবে এবং শিখামধ্যে সবার উপরে বিরাজিতা কালীকে ধ্যান করবে। তাহলেই সাধক সর্বপাপমুক্ত হয়ে শিব ও ব্রহ্মস্বরূপ হবেন এবং সকল মন্ত্র সিদ্ধ হয়ে কৈবল্য বা মুক্তি লাভ করবেন। ঐ মন্ত্রের ঋষি ভৈরব, ছন্দ অনুষ্টুপ, দেবতা কালিকা, বীজ লজ্জা, শক্তি বধূ এবং কবিত্বের জন্যই প্রয়োগ হয়ে থাকে। সাধক এইভাবে ঋষি ও ছন্দ জেনে মন্ত্রের ফল সম্পূর্ণরূপে লাভ করেন এবং যিনি এই সর্ববিদ্যা প্রথমে এক, দুই বা তিন নামে পুটিত করে জপ করেন, তিনিই সদ্গতি প্রাপ্ত হন, অন্যে হয় না।। ১৪ ।।

গোরু, ভূমি, সোনা ইত্যাদি দিয়ে গুরুকে তুষ্ট করে এই শ্রেষ্ঠ মন্ত্র লাভ করবে। গুরুও এই মন্ত্র কুলীন, বিদ্যাভক্ত, শুশ্রুষাপরায়ণ শিষ্যকে প্রদান করবেন। স্ত্রীদিগকে স্পর্শ ও পূজা করে রাতে শিবমন্দিরে একাকী বাস করে লক্ষ বা তার বেশি মন্ত্রজপ করার পর সেই মন্ত্র শিষ্যকে প্রদান করবে। সত্য যে, কালীমন্ত্র, ত্রিপুরামন্ত্র ও দুর্গামন্ত্র ছাড়া সিদ্ধিলাভ সম্ভব নয়। আমিই দুর্গা, আমিই শিব। ওঁ তৎসৎ।। ১৫।।

 সমাপ্ত
কালিকা উপনিষদ্

No comments:

Post a Comment

Follow Us on Facebook @Tarapith.Official