This is Tarapith Blog
Visit Our Main Website www.Tarapith.in

Monday 3 April 2017

তারপীঠে তান্ত্রিকের হোম এবং আশ্চর্য আরোগ্য

April 03, 2017 0
কলকাতায় আটটা মানে সন্ধ্যা, তারাপীঠে কিন্তু তা মধ্যরাতের আমেজ আনে। চারদিকে সূচিভেদ্য অন্ধকার, অন্তত আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। ঈষৎ জড়িত কন্ঠে ‘জয় মা ত্তারা’-র কোরাস কানে আসছিল আর দূরে দূরে চিতার দপদপে আগুন।



এক সন্ধ্যায় আমার ঘরে আড্ডা চলছে, তান্ত্রিক হঠাৎ বললেন—স্যর, তারাপীঠ গেছেন ?
— না।
 — যেতে চান?
কী উত্তর দেবো! তারাপীঠ তো আমার কাছে এক আলো-আঁধারির রহস্যপুরী। স্কুলে পড়ার সময়ে প্রমোদ চট্টোপাধ্যায়ের ‘তন্ত্রাভিলাষীর সাধুসঙ্গ’ পড়ে ফেলেছিলাম। তারাপীঠের মহাশ্মশানের বিচিত্র কাণ্ডকারখানা মনে দাগ কেটে গিয়েছিল। অনেকটাই হয়তো বুঝিনি, কিন্তু সে বয়সে না-বোঝারও একটা আকর্ষণ থাকে। অনেকবার ভেবেছি ঘুরে আসবো, কিন্তু জীবনের আধখানার বেশী তো বাংলার বাইরেই কেটে গেল। বললাম, যাওয়ার ইচ্ছে তো খুবই আছে, কিন্তু...
— ব্যস,ব্যস, আর কিছু বলতে হবে না। আপনার যাওয়া, থাকা, খাওয়া— সব দায়িত্ব আমার। ও তল্লাটে আমার বহুদিনের যাতায়াত জানেন হয়তো।
জানতাম। তান্ত্রিকের ভাগনের কাছেই শুনেছিলাম যে, তার মামাকে প্রায় প্রতি শনিবারই তারাপীঠ যেতে হয়। তাঁর উপার্জনের মূল উৎস ওখানেই, তিনি যে হোমযজ্ঞ করেন, তার মজুরি এগারো থেকে একান্ন হাজার, কেসের গুরুত্ব অনুযায়ী। শুনে রোমাঞ্চ হয়েছিল।
তান্ত্রিকের যে কথা, সেই কাজ। কয়েকদিনের মধ্যে সকালে এক ঝাঁ-চকচকে ইনোভা গাড়ি নিয়ে তিনি হাজির হলেন। যাত্রী আমরা তিনজন আর এক বিশালদেহী উত্তরভারতীয় যুবক, ধরা যাক তার নাম বিজয়। দিনটা সম্ভবত শুক্রবার ছিল। যুবকের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে তান্ত্রিক বললেন, ‘আমার ক্লায়েন্ট, ওর জন্য একটা ছোটো হোম করতে হবে’। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝলাম এ তাঁর এক মুখ্য ভক্ত, সারাক্ষণ সে গরুড়পাখির মত হাত জোড়  করে আছে। ছেলেটির ভাল ব্যবসা আছে, অর্থাৎ তান্ত্রিকের রসদদার।
আমাদের তারাপীঠ পৌঁছতে রাত হয়ে গেল, তাই সে রাতে দেবীদর্শন ছাড়া আর কিছু হয়নি। তান্ত্রিকের ব্যবস্থা ভালই। শুধু যে সরকারি অতিথিশালায় আমাদের থাকার আয়োজন করা হয়েছিল, সেটি মন্দির থেকে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরে, কিন্তু সঙ্গে গাড়ী থাকায় অসুবিধা হয়নি।
পরের দিন সকালে আমরা স্নান করে বেরোলাম। পথে একটু অপ্রত্যাশিত এডভেঞ্চার হয়ে গেল। তারাপীঠের পথেই পড়ে আটলা গ্রাম, বামদেবের, মানুষ যাঁকে সাধক বামাক্ষ্যাপা বলে, জন্মভূমি। তান্ত্রিক গাড়ী থামালেন একেবারে বামদেবের ভিটার সামনে. দেখলাম ঐ পরিবারের লোকজনদের তিনি ভালই চেনেন।
আমরা দাওয়ায় গিয়ে উঠলাম। অতি জীর্ণ দরিদ্রের পর্ণকুটির, কোথায়ও কোন বাহুল্য নেই। উঠোনে বাবার ছবি ও মূর্তি ছাড়াও তাঁর ব্যবহৃত কয়েকটি জিনিষ সাজানো রয়েছে— একটি জীর্ণ রেশমের চাদর, একজোড়া খড়ম আর একটি লাঠি। আমার স্ত্রী নীচু হয়ে খড়ম স্পর্শ করে প্রণামের চেষ্টা করতেই দেখলাম তিনি টলতে টলতে পড়ে যাচ্ছেন। আমি কিছু বোঝার আগে পিছন থেকে ব্যূঢ়োরস্ক বৃষস্কন্ধ বিজয় তার শালপ্রাংশু বাহু দিয়ে তাঁকে ধরে মাটির ওপর দাঁড় করিয়ে দিল।  তিনি বিবর্ণ মুখে আমাকে বললেন, জীবনে এ রকম অভিজ্ঞতা হয়নি। খড়মটা ছুঁতেই মনে হল শরীরের মধ্যে দিয়ে  কয়েক হাজার ভোল্টের কারেন্ট পাস করে গেল। চারদিক অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল...

তান্ত্রিক বললেন, আপনার ওপর বামদেবের অসীম কৃপা যে আপনি বেঁচে গেছেন। ওই শক্তি কি আমরা ধারণ করতে পারি ?
গৃহকর্তা ও বাড়ীর অন্যান্য লোকজন অপ্রতিভ ও অপরাধী বোধ করছিলেন। তাঁদের নানাভাবে আশ্বস্ত করে এবং ঝকঝকে কাঁসার গ্লাসে দেওয়া ঠান্ডা, মিষ্টি কুয়োর জল আর দুটি করে সাদা বাতাসা উদরস্থ করে আমরা গাড়ীতে উঠলাম। এবার ডেস্টিনেশন তারাপীঠ।



তারাপীঠে ঢুকে তান্ত্রিক টুরিস্ট গাইড হয়ে গেলেন। আমাদের ঘুরে ঘুরে দ্বারকা নদী, জীবিত কুণ্ড, বামদেবের সাধনাস্থল— সব দেখিয়ে দিলেন, দু-একজন পূজারীর সঙ্গে আলাপ হল। তাঁর ব্যবস্থাপনায় মন্দির থেকে আমাদের জন্য মায়ের ভোগও এসে গেল। বেলা পড়তে চলেছে, তান্ত্রিক আমাকে একান্তে ডেকে বললেন— স্যর, রাতে হোমে বসবেন ?
ব্যাপারটা কী, তাই জানিনা, জবাব দেবো কি? আমতা আমতা করে বললাম, দেখুন, আমি তো ঠিক প্রস্তুত হয়ে আসিনি, তাই বুঝতে পারছি না।
তিনি হাঁ হাঁ করে উঠলেন, টাকাকড়ির কথা আপনি একদম ভাববেন না। আমি আজ এসেইছি বিজয়ের জন্য হোম করতে। আপনি আমার পাশে বসে থাকবেন, যেমন বলবো তেমনি মন্ত্রোচ্চারণ করবেন, আর কিছু করতে হবে না।
আমি বললাম, তা হলে ঠিক আছে, আমি বসবো। তবে দয়া করে আমার বডির মধ্য দিয়ে কারেন্ট পাস করাবেন না, তাহলে ঐ শ্মশানেই শুয়ে থাকতে হবে...
হা হা করে হেসে তান্ত্রিক বললেন, কোন চিন্তা করবেন না স্যর,বসে দেখুন, হয়তো আপনার ভালোই লাগবে. তাঁর চোখের কোণে এক চিলতে হাসি যেন ঝিলিক দিয়ে উঠলো।
রাত আটটা নাগাদ তারাপীঠের মহাশ্মশানে আমরা চলতে শুরু করলাম। কলকাতায় আটটা মানে সন্ধ্যা, তারাপীঠে কিন্তু তা মধ্যরাতের আমেজ আনে। চারদিকে সূচিভেদ্য অন্ধকার, অন্তত আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। ঈষৎ জড়িত কন্ঠে ‘জয় মা ত্তারা’-র কোরাস কানে আসছিল আর দূরে দূরে চিতার  দপদপে আগুন। তান্ত্রিক আর বিজয় স্বাভাবিক পদক্ষেপেই হাঁটছিল, অর্থাৎ এই পথ তাদের বহুপরিচিত। আমার একখানা হাত বিজয়ের বজ্রমুষ্টিতে, সুতরাং আমাকে তার সঙ্গে পা মেলাতেই হচ্ছিল। তান্ত্রিক আমার স্ত্রীর পথনির্দেশ করছিলেন।
অল্পক্ষণ পরে আমরা একটি মাঠকোঠার নীচে এসে দাঁড়ালাম। মাটি থেকে আন্দাজ দেড়তলা ওপরে একটি ছোট ঘর, সেখানে আলো জ্বলছে. ঘরে ঢোকার জন্য কিন্তু সিঁড়ির কোনও ব্যাপার নেই, অনেকগুলো সিমেন্টের বস্তা স্তূপাকারে রয়েছে, তাদের উপরে পা ফেলে ফেলে উর্ধ্বগমন করতে হবে। বিজয় আমাকে একরকম বহন করেই ওপরে তুললো। বস্তা যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে সিমেন্টের একফালি ল্যান্ডিং, সেখানেই জুতো রাখার ব্যবস্থা। জুতো ছেড়ে আমরা ঘরের মধ্যে ঢুকলাম।
ঘরটি ছোটই, দরজা এবং তার বিপরীতে একটি ছোট জানলা ছাড়া বায়ু চলাচলের কোনও পথ নেই। মাঝখানে একটি কুণ্ড অর্থাৎ একটি মাঝারি সাইজের গহ্বর, তার ভিতর আগুন জ্বলছে, জ্বালানি হিসাবে রয়েছে কয়েকটি কাঠের গুঁড়ি। পরে শুনেছিলাম, সেগুলি কোনও চিতা থেকে আহরিত। কুণ্ডের চারদিকে পূজার সামগ্রী ও দশমহাবিদ্যা এবং অন্যান্য দেবদেবীর ছবি। কুণ্ডের মধ্যে একটি ঝকঝকে ত্রিশূলও ছিল। এক প্রবীণ পূজারী-টাইপের লোক সেখানে বসেছিলেন। বুঝলাম ইনিই কুণ্ডের জিম্মাদার।
আমাদের তান্ত্রিক এর মধ্যে রক্তবস্ত্র পরে ফিট হয়ে গিয়েছেন। কুণ্ডের মুখোমুখি তিনি বসলেন, তাঁর দুপাশে  বিজয় আর আমি মাটিতে জোড়াসন হয়ে বসলাম। আমার স্ত্রী সিট পেলেন জানলার নীচে অর্থাৎ তিনি সোজা কুণ্ড, দরজা এবং তার বাইরে সিমেন্টের বস্তা পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছিলেন।
আসর তৈরি, এবার শো শুরু হলেই হয়। হঠাৎ কয়েকটি স্থানীয় ছেলে এসে ঢুকলো। আমার পাপমন, আমি ভাবলাম হোমের আগে বোধ হয় তোলা দিতে হয়, কিন্তু ছেলেগুলি খুব ভদ্রভাবে জানতে চাইলো— এই কুণ্ডে কতক্ষণ কাজ হবে এবং উত্তর পেয়ে ততোধিক ভদ্রভাবে নমস্কার করে চলে গেল।
তান্ত্রিক কাজ শুরু করলেন। প্রথমেই কুণ্ডে ধুনো প্রভৃতি দাহ্যপদার্থ ঢেলে আগুনটাকে চাঙ্গা করে তুললেন, তার পর হোম শুরু হল। হোমের শুরু অবশ্য গতানুগতিক ভাবে, আমাদের নাম-গোত্র ইত্যাদি জেনে নেওয়া হল, তার পর তিনি মন্ত্রোচ্চারণ শুরু করলেন উচ্চ কণ্ঠে। তার পর দেখলাম তিনি মন্ত্র পড়তে পড়তে  হাতদুটি নাড়তে লাগলেন। একটু পরে লক্ষ্য করলাম—  আগুন তাঁর হাতদু’টির গতিবিধি অনুসরণ করছে, হাওয়ার গতিপথ নয়। একবার তিনি হাত তুললেন, শিখাগুলি প্রায় পাঁচ ফুট ওপরে লকলকিয়ে উঠলো,  হাত নামাতেই আগুন কুণ্ডের মধ্যে অন্তর্ধান করলো। মাঝে মাঝে আমরা কুণ্ডে আহুতিও দিচ্ছিলাম, কলা, পেয়ারা ও কুল জাতীয় ছোট ফল।  প্রায় দেড় ঘণ্টা এভাবে চলল। তার পর তিনি প্রণাম করে উঠে দাঁড়ালেন, আমিও তাঁর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে গেলাম, কিন্তু অনভ্যাস এবং অতক্ষণ কঠিন মাটিতে পা মুড়ে বসে থাকার জন্য পা দু’টি বিদ্রোহ করলো, অনেক কসরৎ করে দাঁড়াতে পারলাম।  দেখলাম, আগুন একেবারে কুণ্ডের নীচে ধিকিধিকি জ্বলছে।  তান্ত্রিক বললেন, একটু পরখ করি কাজটা ঠিক হল কি না-বলে একটা হুইস্কির বোতল (তন্ত্রঘটিত যে কোন ক্রিয়ায় ঐ বস্তুটির উপস্থিতি বাধ্যতামূলক) খুলে ভেতরের তরল কুণ্ডের মধ্যে ঢেলে দিলেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কুণ্ড থেকে শীৎকার আর গোঙানির মাঝামাঝি একটা বিচিত্র শব্দ শোনা গেল। আমি চমকে উঠে বললাম— ওটা কি হল?
তান্ত্রিক হাসিমুখে বললেন— আগুন কেঁদেছে, আমাদের অপারেশন সাকসেসফুল। চলুন, এবার যাওয়া যাক।
কিন্তু যাওয়ার আগে আরও কিছু ঘটা বাকি ছিল। ঘর থেকে বেরিয়ে জুতো পরতে গিয়ে দেখা গেল সকলের সব কিছু ঠিক থাকলেও আমার পাদুকা দু’টি অন্তর্ধান করেছে. কুণ্ডের রক্ষক বিজনবাবু অপ্রতিভ হয়ে বললেন— কেউ কি এসে তুলে নিয়ে গেল?
বিজয় বলল, যে ছেলেগুলো এসেছিল, তাদের কাজ নয় তো!
আমার স্ত্রী  প্রতিবাদ করে বললেন, অসম্ভব। আমি তো দরজার দিকে মুখ করে বসেছিলাম, ওরা সোজা নেমে চলে গিয়েছে, এক সেকেন্ডের জন্যও থামেনি। আর তার পরে কেউ উপরে ওঠেনি, আমি বাজি রেখে বলতে পারি।
তান্ত্রিক আমাকে বললেন, জুতোটা চামড়ার ছিল তো ? নাকি কাপড় বা সোয়েডের?
আমি বললাম, পাতি চামড়ার চটি, বড় দোকানেরও নয়।
তান্ত্রিক অন্যমনস্ক হয়ে বললেন, হুঁ, চামড়া আর চটি মানে নিম্নাঙ্গ। চিন্তা করবেন না, আপনার পা ঠিক হয়ে যাবে(তা অবশ্য হয়নি, তবে খারাপও হয়নি)। এখন আপনি বিজনদার হাওয়াইটা পরে বেরোন, দেখা যাক কী ব্যবস্থা করা যায়। তান্ত্রিকের মোবাইল সক্রিয় হয়ে উঠলো। মন্দিরের আশেপাশে দোকানের লাইন, সেখানের এক জুতোর দোকানের ঝাঁপ খুলিয়ে রাত সাড়ে দশটায় আমার জুতো কেনা হল। তন্ত্রের মহিমা অপার।



গেস্টহাউসে ফিরে তান্ত্রিক বললেন, স্যর, ওরা খাবার গরম করতে করতে একটা ছোট্ট রাউন্ড হয়ে যাক।
আমি বললাম, নিশ্চয়ই, আজ আপনি এত পরিশ্রম করলেন, you deserve it।
বিজয় গ্লাসে সোডা ঢালছিল, হঠাৎ লাফিয়ে উঠে বলল, ভাবীজী,ভাবীজী, শুনিয়ে! দাদা কী আওয়াজ তো বিলকুল সাফ হো গ্যয়া, সব কুছ সমঝ আ রহা হৈ!
একটু টীকা প্রয়োজন. দু হাজার পাঁচ সালে ব্রেনে হেমরেজের পর অনেকদিন আমার কথা বন্ধ ছিল। অবশেষে তা ফিরে এলো কিন্তু ঘোরতর বিকৃত ও বিকলাঙ্গরূপে। মানে কথাগুলো দলা পাকিয়ে, জড়াজড়ি করে বেরিয়ে আসতো, আমার স্ত্রী আর মেয়ে ছাড়া কেউ তা বুঝতো না। আমি তাই কথা বলাই কমিয়ে দিয়েছিলাম, এখনো আবশ্যক না হলে বলি না। সে রাত্রে বীরভূমের ওই গেস্টহাউসে সব হিসাব বদলে গেল। সেদিন বহু রাত পর্যন্ত সাধ মিটিয়ে কথা বলেছিলাম। মনে আছে, পরের দিন মুম্বাইয়ের এক বন্ধুকে ফোন করেছিলাম, তিনি বিশ্বাস করেননি যে আমি কথা বলছি।
প্রাতরাশের টেবিলে তান্ত্রিক বললেন, এখন বুঝলেন তো কেন হোমে বসতে বলেছিলাম।
আমার স্ত্রী  কৃতজ্ঞতা জানাতে তাঁর মুখটা উদাস হয়ে গেল। বললেন, বেশি বলবেন না ম্যাডাম, এটা কিন্তু থাকবে না। কলকাতায় ফিরতে ফিরতেই দেখবেন সব আগের মত হয়ে গিয়েছে। আপনাদের বিশ্বাস জন্মাবার জন্য ওটা দরকার ছিল। বলতে বলতে তিনি সোজা হয়ে বসে বললেন, কিন্তু মনে হয় আমি পথটা পেয়ে গিয়েছি. আবার আপনাকে নিয়ে আসবো স্যর, আপনাকে পুরো সুস্থ করে তুলবো। সেটা এ রকম চিটিংবাজী হবে না।
(ক্রমশ)

Thank You Ebela
© ebela.in
Read more...

Friday 31 March 2017

মহাতীর্থ কালীঘাট সম্পর্কে ১০টি তথ্য।

March 31, 2017 0

১. কালীঘাটের বর্তমান মন্দির দুশো বছরের বেশি পুরনো নয়। হাটখোলার দত্ত পরিবারের কালীপ্রসাদ দত্ত এবং বড়িশার সাবর্ণ রায়চোধুরী পরিবারের সন্তোষ রায়চৌধুরী এই মন্দির নির্মাণ করান।
২. কালীঘাট তীর্থের উল্লেখ রয়েছে ১৫ শতকের মনসা ভাসানের গানে। ১৭ শতকের ‘কবিকঙ্কন চণ্ডী’-তেও এর উল্লেখ রয়েছে। তবে এই তীর্থের বয়স আরও বেশি বলেই মনে করেন গবেষকরা। আদিতে এটি একটি পর্ণকুটির ছিল। ১৬ শতকে রাজা মানসিংহ প্রথম একটি পাকা মন্দির নির্মাণ করান।
৩. কালীঘাটকে সতীর একান্নপীঠের অন্যতম ধরা হয়। সে দিক থেকে দেখলে এর প্রাচীনত্ব আরও বেশি।
৪. কালীঘাটের মাতৃমূর্তির সঙ্গে অন্য কোনও কালীমূর্তির কোনও মিল নেই। এই মূর্তি অনন্য।

৫. একান্ন পীঠ বলে পরিচিত তীর্থগুলিকে বজ্রযানী বৌদ্ধ তীর্থ হিসেবে অনেকে মনে করেন। এবং প্রতিটি তীর্থেই কোনও না কোনও প্রস্তরকে দেবীরূপে পূজা করা হয়। সেদিক থেকে দেখলে কালীঘাটের কালীমাতাও শিলাস্বরূপা।
৬. মাতৃমূর্তির বর্তমান রূপটি দান করেন ব্রহ্মানন্দ গিরি ও আত্মারাম গিরি নামের দুই সন্ন্যাসী।
৭. কলকাতা অঞ্চলে প্রাচীন নাথ ধর্মের বিশেষ প্রতিপত্তি ছিল বলে অনেকে মনে করেন। ‘চৌরঙ্গী’ নামটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নাথ-কিংবদন্তি। কালীঘাটের সঙ্গে নাথপন্থীদের নিবিড় সম্পর্ক ছিল বলে অনেক গবেষক অনুমান করেন।

৮. কালীঘাটের কালীর ভৈরব হলেন নকুলেশ্বর মহাদেব। তাঁর মন্দির কালীমন্দিরের কাছেই। আগে এই স্থান গভীর জঙ্গলে আকীর্ণ ছিল।
৯. কালীঘাট মন্দিরের সংলগ্ন ১০ কাঠার একটি পুকুর রয়েছে। কথিত আছে, এই পুকুর থেকেই সতীঅঙ্গ আবিষ্কৃত হয়েছিল। এই পুকুরের নাম ‘কু‌ণ্ড পুকুর’ বা ‘কুন্ডু পুকুর’। এর জলকে গঙ্গাজলের তুল্য পবিত্র ধরা হয়।
১০. ইংরেজ আমলে কালীঘাটের অন্য প্রতিপত্তি বাড়ে। এক একটা বড় কারণ, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শ্বেতাঙ্গ কর্মচারীরা নিয়মিত এই মন্দিরে আসতেন এবং একপ্রকার বিশ্বাস থেকে পুজোও দিতেন। হিন্দু মন্দিরে ইউরোপীয়দের আগমন তেমন সুলভ ছিল না সেযুগে। কিন্তু কালীঘাটে সেটা নিয়মিত হয়ে ওঠে।      
Read more...

শক্তিপীঠের মূল রহস্য

March 31, 2017 1


কিংবদন্তি অনুসারে, সত্য যুগের কোনও এক সময়ে মহাদেবের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য দক্ষ রাজা বৃহস্পতি নামে এক যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। কন্যা সতী দেবী তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে 'যোগী' মহাদেবকে বিবাহ করায় দক্ষ ক্ষুব্ধ ছিলেন। দক্ষ মহাদেব ও সতী দেবী ছাড়া প্রায় সকল দেব-দেবীকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। মহাদেবের অনিচ্ছা সত্ত্বেও সতী দেবী মহাদেবের অনুসারীদের সাথে নিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন।
কিন্তু সতী দেবী আমন্ত্রিত অতিথি না হওয়ায় তাঁকে যথাযোগ্য সম্মান দেওয়া হয়নি। অধিকন্তু দক্ষ মহাদেবকে অপমান করেন। সতী দেবী তাঁর স্বামীর প্রতি পিতার এ অপমান সহ্য করতে না পেরে যোগবলে আত্মাহুতি দেন।
শোকাহত মহাদেব রাগান্বিত হয়ে দক্ষর যজ্ঞ ভণ্ডুল করেন এবং সতী দেবীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রলয় নৃত্য শুরু করেন। অন্যান্য দেবতা অনুরোধ করে এই নৃত্য থামান এবং বিষ্ণুদেব তাঁর সুদর্শন চক্র দ্বারা সতী দেবীর মৃতদেহ ছেদন করেন। এতে সতী মাতার দেহখণ্ডসমূহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পড়ে এবং পবিত্র পীঠস্থান (শক্তিপীঠ) হিসেবে পরিচিতি পায়।
Read more...

হাতির মতো গনেশের মাথাটি হওয়ার কারন কি!!

March 31, 2017 0

গণেশের মাথাটি হাতির মতো কেন, তার ব্যাখ্যা একাধিক পুরাণের নানা গল্পে দেওয়া হয়েছে। সাধারণত, এই ব্যাখ্যা গণেশের জন্ম-সংক্রান্ত একটি বিষয়। এই সব গল্পে গণেশ-উপাসনাকারী সম্প্রদায়ের বিপুল জনপ্রিয়তার ব্যাখ্যাও পাওয়া যায়। ভক্তেরা সাধারণত তাঁর ‘গজমুণ্ড’টিকে বুদ্ধি, অতুলনীয় শক্তি, বিশ্বস্ততা এবং হাতির অন্যান্য চারিত্রিক গুণের প্রতীক হিসেবে দেখেন। তাঁর বিশাল কানদুটি জ্ঞান ও সাহায্যপ্রার্থীর প্রার্থনা শ্রবণের ক্ষমতার প্রতীক।
শিব-কর্তৃক শিরোশ্ছেদ :

সবচেয়ে জনপ্রিয় গল্পটি সম্ভবত শিব পুরাণ থেকে গৃহীত হয়েছে। এক দিন দেবী পার্বতী কৈলাসে স্নান করছিলেন। স্নানাগারের বাইরে তিনি নন্দীকে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন, যাতে তাঁর স্নানের সময় কেউ ভিতরে ঢুকতে না পারে। এই সময় শিব এসে ভিতরে প্রবেশ করতে চান। নন্দী শিবের বাহন। তাই প্রভুকে তিনি বাধা দিতে পারলেন না। পার্বতী রেগে গেলেন। তিনি ভাবলেন, নন্দী যেমন শিবের অনুগত, তেমনই তাঁর অনুগত কোনো গণ নেই। তাই তিনি তাঁর প্রসাধনের হলুদমাখা কিছুটা নিয়ে গণেশকে সৃষ্টি করলেন এবং গণেশকে নিজের অনুগত পুত্র রূপে ঘোষণা করলেন।
এরপর থেকে পার্বতী স্নানাগারের বাইরে গণেশকে দাঁড় করাতেন। একবার শিব এলেন। তিনি ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলেন। কিন্তু গণেশ তাঁকে বাধা দিলেন। শিব রেগে গিয়ে তাঁর বাহিনীকে আদেশ দিলেন গণেশকে হত্যা করার। কিন্তু তারা গণেশের সামান্য ক্ষতি করতেও সক্ষম হল না।
এতে শিব অবাক হলেন। তিনি বুঝলেন, গণেশ সামান্য ছেলে নয়। তাই তিনি নিজে গণেশের সঙ্গে যুদ্ধ করতে এলেন। শিব গণেশের মুণ্ডটি কেটে তাকে হত্যা করলেন। একথা জানতে পেরে পার্বতীও রেগে সমগ্র সৃষ্টি ধ্বংস করে ফেলতে উদ্যোগী হলেন। তখন সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা তাঁর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করলেন। পার্বতী দুটি শর্ত দিলেন। প্রথমত, গণেশের প্রাণ ফিরিয়ে দিতে হবে এবং সকল দেবতার পূজার আগে তাঁর পূজার বিধি প্রবর্তন করতে হবে।
এই সময় শিবেরও রাগ পড়ে গিয়েছিল। তিনি পার্বতীর শর্ত মেনে নিলেন। তিনি ব্রহ্মাকে উত্তর দিকে পাঠিয়ে বললেন, যে প্রাণীটিকে প্রথমে দেখতে পাওয়া যাবে, তারই মাথাটি কেটে আনবে। কিছুক্ষণ পরে ব্রহ্মা এক শক্তিশালী হাতির মাথা নিয়ে ফিরে এলেন। শিব সেই মাথাটি গণেশের দেহে স্থাপন করলেন। তারপর তাঁর মধ্যে প্রাণের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হল। শিব গণেশকে নিজ পুত্র ঘোষণা করলেন এবং সকল দেবতার পূজার আগে তাঁর পূজার ব্যবস্থা করে দিলেন। সেই সঙ্গে তাঁকে সকল গণের অধিপতি নিযুক্ত করা হল।

শিব ও গজাসুর :
গণেশের উৎপত্তি ও তাঁর হাতির মাথা নিয়ে আরেকটি গল্প প্রচলিত আছে: পুরাকালে হাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এক অসুরের অস্তিত্ব ছিল। তার নাম ছিল গজাসুর। সে একবার প্রচণ্ড তপস্যা করেছিল। শিব তার তপস্যার তুষ্ট হয়ে তাকে মনোমত বর দিতে ইচ্ছা করেন। অসুর চাইল, তার শরীর থেকে যেন সব সময় আগুন বেরিয়ে আসতে থাকে, যাতে কেউ তার কাছে ঘেঁষতে সাহস না পায়। শিব তাকে সেই বর দেন। কিন্তু গজাসুর তার তপস্যা চালিয়ে গেল। শিব আরেকবার তার সামনে এসে তাকে বর দিতে চাইলেন। অসুর বলল, “আমি চাই আপনি আমার পাকস্থলীতে বাস করুন।”
অল্পে তুষ্ট শিব গজাসুরকে মনোমত বর দিয়ে দেন। কিন্তু এই বর অন্য সমস্যার সৃষ্টি করে। পার্বতী তাঁকে খুঁজতে বের হন। শেষে তিনি নিজের ভাই বিষ্ণুর সাহায্যে শিবকে খুঁজে পান। বিষ্ণু তখন শিবের বাহন নন্দীকে এক নৃত্যকারী ষাঁড় বানিয়ে নিজে বাঁশিওয়ালার ছদ্মবেশ নেন। এরপর উভয় আসেন গজাসুরের কাছে বাঁশি বাজাতে। বিষ্ণুর বাঁশি শুনে গজাসুর খুশি হয়ে তাঁকে কিছু দিতে চাইল। বিষ্ণু বললেন, তাঁর গজাসুরের পাকস্থলীতে বন্দী শিবের মুক্তি চাই। সে বিষ্ণুকে চিনতে পেরে তাঁর পায়ে লুটিয়ে পড়ল শিব মুক্তি পেলেন। তখন গজাসুর শেষ বরটি চাইল। সে বলল, “আমি চাই, আমি মরে যাবার পরও যেন লোকে আমার মাথাটিকে পূজা করে।” শিব তখন নিজের পুত্রকে সেখানে এনে গজাসুরের সঙ্গে নিজ পুত্রের মুণ্ডবদল করালেন। সেই থেকে সকল দেবতার পূজার আগে গণেশের পূজা চালু হল।
শনির দৃষ্টি :
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ-এর কাহিনি অনুসারে, গণেশের জন্ম হয়েছিল অন্যভাবে। শিব ও পার্বতী পুত্রলাভের আশায় বর্ষব্যাপী পুণ্যক ব্রত ও বিষ্ণুপূজা করেছিলেন। এই ব্রতে তুষ্ট হয়ে বিষ্ণু বলেছিলেন, তিনি প্রতি কল্পে পার্বতীর পুত্ররূপে অবতীর্ণ হবেন। এরপর পার্বতীর গর্ভে এক পুত্রের জন্ম হয়। সকল দেবদেবী তাঁর জন্ম উপলক্ষে উৎসবে মেতে ওঠেন। যদিও সূর্যের পুত্র শনি শিশুটির দিকে তাকাতে ইতস্তত করেন। কারণ শনির দৃষ্টি অমঙ্গলজনক। কিন্তু পার্বতীর পীড়াপীড়িতে শনি শিশুটির দিকে তাকাতে বাধ্য হন। মুহুর্তের মধ্যে শিশুর মস্তক ছিন্ন হয়ে গোলোকে চলে যায়। শিব ও পার্বতী এতে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়লে বিষ্ণু গরুড়ের পিঠে চড়ে পুষ্পভদ্র নদীর তীরে এসে উপস্থিত হন। সেখান থেকে তিনি একটি হস্তিশিশুর মাথা নিয়ে ফিরে আসেন। এরপর পার্বতীর শিশুর মুণ্ডহীন দেহে সেই হাতির মাথাটি বসিয়ে তার প্রাণ ফিরিয়ে আনা হয়। এই শিশুর নাম রাখা হয় গণেশ এবং দেবতারা তাঁকে আশীর্বাদ করেন।

Read more...

কৌশিকী অমাবস্যার মূল রহস্য

March 31, 2017 0

কৌশিকী অমাবস্যা, অন্য সব অমাবস্যার থেকে একটু আলাদা কারণ তন্ত্র মতে ও শাস্ত্র মতে ভাদ্র মাসের এই তিথি টি একটু বিশেষ কারণ অনেক কঠিন ও গুহ্য সাধনা আজকের দিনে করলে আশাতীত ফল মেলে, সাধক কুন্ডলিনী চক্র কে জয় করে,বৌদ্ধ ও হিন্দু তন্ত্রে এই দিনের এক বিশেষ 'মহাত্ব আছে, তন্ত্র মতে আজ এই রাত কে তারা রাত্রি বলাহয় ও এক বিশেষ মুহুর্তে স্বর্গ ও নরক দুই এর দুয়ার মুহুর্তের জন্য উম্মুক্ত হয় ও সাধক নিজের ইচ্ছা মতো ধনাত্মক অথবা ঋণাত্মক শক্তি নিজের সাধনার মধ্যে আত্মস্থ করে, ও সিদ্ধি লাভ করে চন্ডি তে বর্ণিত মহা সরস্বতী দেবীর কাহিনী তে বলা আছে, পুরাকালে একবার সুম্ভ ও নিসুম্ভ কঠিন সাধনা করে ব্রম্ভা কে তুষ্ট করলে চতুরানন তাদের বর প্রদান করেন কোনো পুরুষ তাদের বধ করতে পারবেনা শুধু কোনো অ-যোনি সম্ভূত নারী তাদের বধ করতে পারবে অর্থাত এমন এক নারী যে কোনো মাতৃ গর্ভ থেকে উত্পন্ন হয়নি তার হাতেই এই দুই অসুর ভাই এর মৃত্যু হবে, আর পৃথিবীতে এমন নারী কথায়, এমনকি অদ্যা শক্তি মহামায়া মানকা রানীর গর্ভে জন্ম নিয়াছেন তাই তিনিও ওদের নাশ করতে পারবেন না,তবে কি উপায়? পূর্ব জন্মে পার্বতী যখন সতী রূপে দক্ষ যজ্ঞ স্থলে আত্মাহুতি দেন তার কারণে এই জন্মে ওনার গাত্র বর্ণ কালো মাঘের মতো তাই ভোলা নাথ আদর করে তাকে কালিকা ডাকতেন, একদিন দানব ভাই দের দ্বারা পীড়িত দেবতারা যখন ক্লান্ত কৈলাশ এ আশ্রয় নিলেন, শিব সব দেবতাদের সামনেই পার্বতীকে বললেন "কালিকা তুমি ওদের উদ্ধার করো " সবার সামনে কালী বলে ডাকাতে পার্বতী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ,অপমানিত ও ক্রোধিত মনে মানস সরোবর এর ধরে কঠিন তপস্যা করলেন ও তপস্যান্তে শীতল মানস সরোবর এর জলে স্নান করে নিজের দেহের সব কালো কোশিকা(melanin) পরিত্যাগ করলেন ও পূর্নিমার চাদের মতো গাত্র বর্ণ ধারণ করলেন ও ওই কালো কোশিকা গুলি থেকে এক অপূর্ব সুন্দর কৃষ্ণবর্ণ দেবীর সৃষ্টি হয় ইনি দেবী কৌশিকী, আজ সেই তিথি যেদিন এই দেবীর উত্পত্তি হয় ও সুম্ভ ও নিসুম্ভ কে বধ করেন, তাই এই অমাবস্যার নাম কৌশিকী অমাবস্যা, আবার আজকের এই দিনে দশ মহাবিদ্যার অন্যতম দেবী তারা আজ মর্ত ধামে আবির্ভূত হন, পশ্চিমবঙ্গের বীরভুম জেলায় অবস্থিত তারাপীঠ এ আজ এই উপলক্ষ্যে বিশাল উত্সাভ হয়, তারা দেবী কে বৌদ্ধ ধর্মের অন্তর্গত বজ্রযান এ নীলসরস্বতী ও বলাহয় লোকে বিশ্বাস করে এই তিথিতে ভাত খেতে নেই







Read more...

কালীকা উপনিষদ

March 31, 2017 0

কালীকা উপনিষদ:-
ব্রহ্মরূপিণী সর্ব-ঐশ্বর্যশালিনী কালীকে ব্রহ্মরন্ধ্রেই প্রাপ্ত হওয়া যায়।। ১ ।।

তিনি সত্ত্ব, রজঃ ও তমো – এই তিন গুণ বিবর্জিতা; তিনিই সকল জীবের রূপে বিরাজমানা বা ‘ক্রীং’ অক্ষররূপা।। ২ ।।

ক্রীং বীজমন্ত্র তিনবার উচ্চারণ করে কূর্চবীজ হুং মন্ত্র দুবার উচ্চারণ করবে। তারপর দুবার ভূবনাবীজ হ্রীং মন্ত্র উচ্চারণ করে ‘দক্ষিণে কালিকে’ বলিয়াকে মাকে দর্শন করবে। ঐ হ্রীং মন্ত্রের সঙ্গে সপ্তবীজ উচ্চারণ করে অগ্নিপত্নী অর্থাৎ স্বাহা মন্ত্র যোগ করবে। এই মন্ত্র জপ করলে সাধক শিবময় হন।। ৩ ।।

তাঁরই সদগতি হয়, অপরের হয় না। তিনি নরশ্রেষ্ঠ, দেবশ্রেষ্ঠ ও সর্বশ্রেষ্ঠ হন। নতুন কালো মেঘের মতো যাঁর গায়ের রং, যিনি নিবিড়স্তনী, করাল দন্তবিশিষ্টা ও শবাসনা, সেই পরাপ্রকৃতি কালীকে ধ্যান করবে।। ৪ ।।

ত্রিকোণ বা নয় কোণবিশিষ্ট পদ্মের উপর ষড়ঙ্গন্যাস করে প্রকাশশীলা পরাপ্রকৃতিকে অর্চনা করবে। তাঁর দ্বারাই সর্বাঙ্গ প্রাপ্ত হবে।। ৫।।

কালী, কপালিনী, কুল্লা, কুরুকুল্লা, বিরোধিনী, বিপ্রচিত্তা, উগ্রা, উগ্রপ্রভা, দীপ্তা, নীলা, ঘনা, বলাকা, মাত্রা, মুদ্রা, মৃতা – এই পনেরোজন জ্যোতির্ময়ী দেবী পনেরোটি কোণে বিরাজ করছেন।। ৬।।

ব্রাহ্মী, মাহেশ্বরী, ঐন্ত্রী, চামুণ্ডা, কৌমারী, অপরাজিতা, বারাহী ও নারসিংহী – এঁরা অষ্টদলস্থিতা দেবী। দুই, তিন, চার, ছয়, বারো, আঠারো, চোদ্দো বা ষোলোস্থানীয় স্বরবিশেষ দ্বারা প্রণবের সঙ্গে এঁদের আমন্ত্রণ জানাতে হয় এবং মূলমন্ত্রের দ্বারা অঙ্গদেবতার আবাহন করে মূলমন্ত্রের দ্বারাই পূজা করতে হয়।। ৭ ।।

যে সাধক এই মন্ত্রগুলি নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে লক্ষ লক্ষ জপ করতে পারবেন, তিনি নিশ্চয়ই পাপমুক্ত হবেন। তাঁর দ্বারা আর দুষ্কার্জ হবে না, তিনি ব্রহ্মত্ব লাভ করবেন। তিনি সকল লোক হতে মুক্ত হয়ে আয়ু, আরোগ্য ও ঐশ্বর্যের পূর্ণ অধিকারী হবেন।। ৮ ।।

পঞ্চমকারের বেদসম্মত আধ্যাত্মিক অর্থ বুঝে যিনি তাঁর পূজা করবেন, তিনিই সতত ভজনশীল, তিনিই ভক্ত। তাঁর প্রচ্ছন্নতা দূর হয়ে মহত্ব প্রকাশিত হয়। তিনি নিরবিচ্ছিন্ন সুখ শান্তি লাভ করে সংসারপাশ থেকে চিরমুক্ত হন। সিদ্ধমন্ত্রজপকারী সাধকের অনিমাদি অষ্টসিদ্ধি লাভ হয়। তিনি জীবন্মুক্ত, সর্বশাস্ত্রবিদ হন। তাঁর হিংসাবৃত্তি বিনষ্ট হওয়ায় তিনি সকল জীবের বিশ্বাসভাজন হন।। ৯।।

সিদ্ধমন্ত্র যিনি জপ করেন তাঁর কাছে রাজাও ভৃত্যস্বরূপ হয়। সেই সাধক বিশ্বাতীত পরাৎপর আনন্দময় শিবস্বরূপ হন। এই সর্বদেবাত্মক বীজমন্ত্র যিনি জপ করেন, তিনি শিবস্বরূপ হন, এবং অনিমাদি অষ্টসিদ্ধির প্রভু হয়ে কালিকাকে লাভ করতে সক্ষম হন। শিব বলেছেন, হে দেবী, যিনি এই ঘোরা দক্ষিণাকালীকে ধ্যান করেন, তিনি কৃৎকর্তব্য, নিষ্পাপ, আমাদের উভয়ের কৃপাপাত্র ও জীবন্মুক্ত হন।। ১০।।

জপের দশমাংশ হোম করা উচিত, তাহলেই কালী তৃপ্ত হন। এতে জ্ঞান নিরুদ্ধ হয় না। কারণ দেবী সরস্বতীও অনিরুদ্ধা হয়ে চিরদিন সব কামনা পূর্ণ করেন। যে সাধক শ্রদ্ধাসহকারে এই কালীমন্ত্র জপ করেন, তিনি জ্ঞানলাভ করে চিরমুক্ত হন। শান্তচিত্তে সবসময় কালীপূজায় নিরত থেকে দিনের বেলা ব্রহ্মচারী অর্থাৎ ব্রহ্মনিষ্ঠ এবং রাতে কৌপিনধারী, আত্মরমণপরায়ণ ও জপপূজানিয়মে তৎপর হয়ে মাতৃরূপ নারীগণের সশ্রদ্ধ আজ্ঞাবহ হবে।। ১১।।

তারপর শুদ্ধ জলে তর্পণ ও পূজা করবে এবং সবসময় আত্মাকে কালীরূপে চিন্তা করবে। সকল স্ত্রীলোকের অনুগত হবে, তাতেই যাবতীয় হত্যাপাপ থেকে মুক্তিলাভ করতে পারবে। তারপর পঞ্চমকারের দ্বারা পূজা করলে ধনধান্য, পশু ও বিদ্যা প্রভৃতি যাবতীয় কাম্যবস্তু লাভ করবে। অতীত-ভবিষ্যৎ, দৃশ্যাদৃশ্য, স্থাবরজঙ্গম যা কিছু আছে, তা সবই কালীর কলামাত্র। কালিকাতন্ত্রে কথিত আছে, তিনি শ্রবণীয়, জ্ঞাতব্য, স্মরণীয় বা ধ্যানযোগ্য। শিব বলেছেন, হে দেবী, এই কালীমন্ত্রজপকারী অগম্যাগমন-পাপ ও ভ্রুণহত্যা-পাপ থেকে মুক্ত হয়ে সর্বসুখভাগী হয়ে থাকেন। তিনি সর্ববেত্তা, সর্বত্যাগী, নিঃসঙ্গ, শুদ্ধবুদ্ধি, সর্ববেদজ্ঞ, সর্বমন্ত্রজপকারী, সর্বশাস্ত্রজ্ঞ ও সর্বযজ্ঞকারী হয়ে তোমার ও আমার অত্যন্ত প্রিয় হন।। ১২।।

শিব আরও বলেছেন, সাধক সংশয়শূন্য হয়ে সব কাজ মনের দ্বারা সম্পাদনা করবেন এবং তারপর অপূর্ব জ্যোতির্ময় ত্রিকোণ মূলাধার চিন্তা করে সেই মূলাধারের অধঃ ও উর্ধ্বে সুষুম্নাকে স্থাপন করবে।। ১৩।।

নীলমেঘের মধ্যে স্থিতা, দীপ্তিশালিনী, বিদ্যুৎরেখাসমা, সূর্যের মতো অতুলনীয়া নীলা ও পীতা দেবীকে স্মরণ করবে এবং শিখামধ্যে সবার উপরে বিরাজিতা কালীকে ধ্যান করবে। তাহলেই সাধক সর্বপাপমুক্ত হয়ে শিব ও ব্রহ্মস্বরূপ হবেন এবং সকল মন্ত্র সিদ্ধ হয়ে কৈবল্য বা মুক্তি লাভ করবেন। ঐ মন্ত্রের ঋষি ভৈরব, ছন্দ অনুষ্টুপ, দেবতা কালিকা, বীজ লজ্জা, শক্তি বধূ এবং কবিত্বের জন্যই প্রয়োগ হয়ে থাকে। সাধক এইভাবে ঋষি ও ছন্দ জেনে মন্ত্রের ফল সম্পূর্ণরূপে লাভ করেন এবং যিনি এই সর্ববিদ্যা প্রথমে এক, দুই বা তিন নামে পুটিত করে জপ করেন, তিনিই সদ্গতি প্রাপ্ত হন, অন্যে হয় না।। ১৪ ।।

গোরু, ভূমি, সোনা ইত্যাদি দিয়ে গুরুকে তুষ্ট করে এই শ্রেষ্ঠ মন্ত্র লাভ করবে। গুরুও এই মন্ত্র কুলীন, বিদ্যাভক্ত, শুশ্রুষাপরায়ণ শিষ্যকে প্রদান করবেন। স্ত্রীদিগকে স্পর্শ ও পূজা করে রাতে শিবমন্দিরে একাকী বাস করে লক্ষ বা তার বেশি মন্ত্রজপ করার পর সেই মন্ত্র শিষ্যকে প্রদান করবে। সত্য যে, কালীমন্ত্র, ত্রিপুরামন্ত্র ও দুর্গামন্ত্র ছাড়া সিদ্ধিলাভ সম্ভব নয়। আমিই দুর্গা, আমিই শিব। ওঁ তৎসৎ।। ১৫।।

 সমাপ্ত
কালিকা উপনিষদ্
Read more...

Follow Us on Facebook @Tarapith.Official